কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মালেক আকন্দ নিজে এবং তাঁর সমর্থকরা সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। নির্বাচনে হেরে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি প্রদান করছেন। এতে মহিপুর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। প্রতিদ্বন্ধী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফজলু গাজী সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। শুক্রবার বেলা ১১ টার সময় কলাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট শাহজাহান পারভেজ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বড় ভাই মো. নাজমুল আহসান, ছোট ভাই মো. মজনু গাজী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নান্নু মুন্সী প্রমুখ।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান প্রতিপক্ষ নৌকা মার্কার প্রার্থীর ছেলের শশুর বাড়ির আত্মীয়। আমার কর্মীদের মারধর এবং হয়রানীর অভিযোগ থানায় জানালেও কোনো প্রতিকার পাইনা। বৃহস্পতিবার মহিপুর বাজার এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আমার মেয়ে নুরে জান্নাত সুমি ভোট চাইতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছেলে সোহাগ আকন আমার মেয়েকে জোড় করে সে এলাকা থেকে বের করে দেয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আমার কর্মীদের ওপর হয়রানীর মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
এ ছাড়া অনিয়ম নিয়ে ওসির কাছে আরও ৮-১০টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কোনোটিরই প্রতিকার পাইনা। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে দ্রুত ওসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। মহিপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার জন্য গত ৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে স্বতন্ত্র এ চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ২০ অক্টোবর ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। কলাপাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনী এলাকায় নৌকার সমর্থনে ভোট চাইতে গিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে ভোটকেন্দ্র দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। এতে আমি শঙ্কিত আদৌ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হবে কীনা?
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফজলু গাজী অভিযোগ করে আরও বলেন, নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে নিজ শিববাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেমপুর সিনিয়র মাদ্রাসা, নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুধিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নজিবপুর সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই নির্বাহী মেজিষ্ট্রেটসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মহিপুর থেকে বের করে দেয়া, কোনো অস্ত্রধারী যাতে মহিপুরে না থাকতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আমি চাকুরি করতে এসেছি। আমার কেউ আত্মীয় নয়, পরও নয়। আমার কাছে সবাই সমান। আমার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী যতগুলো অভিযোগ দিয়েছে, তা আমি যাচাই করে দেখেছি। কোনোটিরই সত্যতা পাইনি। তা ছাড়া আমার ব্যাপারে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, তদন্তে যদি তা সত্য প্রমানিত হয় তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।’ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল মালেক আকন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি কোনো বহিরাগত সন্ত্রাসী আনি নাই। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী তালতলী-বরগুনা থেকে বহিরাগত এনে জড়ো করেছেন। তিনিই আমার কর্মী-সমর্থকদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার কথা বলেছেন। আমিও চাই একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’ মহিপুর ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কাছেও দু’দিন আগে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী একটি অভিযোগ দিয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রকেই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেভাবেই প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু করার জন্য র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, বিচারিক ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।’
Leave a Reply